কুমিল্লা মহানগরীর টিক্কারচর কবরস্থানে লাশ দাফনের তিলমাত্র ঠাঁই নেই। কুমিল্লায় বেওয়ারিশ লাশ দাফনের একমাত্র এ কবরস্থানটির মাটি খুঁড়লেই বেরিয়ে আসে লাশের মাথার খুলি ও দেহের বিভিন্ন অংশের হাড় ও কঙ্কাল। ২০০১ সাল থেকে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত গত ২০ বছরে এ কবরস্থানে বেওয়ারিশ (অজ্ঞাতনামা) হিসেবে ২ হাজার ৪৯১জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। এ কবরস্থান পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম (ইসলামী জনকল্যাণ সংস্থা) কুমিল্লা শাখা কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, জেলায় অজ্ঞাত (নাম ও পরিচয়হীন) লাশের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নদী-নালা, ঝোঁপ-জঙ্গল, খাল-বিল, মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও রেলওয়ে সড়কের পাশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই উদ্ধার করছেন অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ।
পুলিশের তথ্যমতে, হত্যা-দুর্ঘটনার শিকার এসব মানুষ। পুলিশ ২০০১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৩ ডিসেম্বর (বুধবার) পর্যন্ত জেলার ১৭টি উপজেলা এলাকা থেকে ২ হাজার ৪৯১টি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করেছে। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী। পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হলে উদ্ধার হওয়া লাশের ছবি তুলে ও ময়নাতদন্ত করে দাফনের জন্য কুমিল্লা নগরীর ইপিজেড রোডের আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে পাঠানো হয়। পরে সেই লাশ দাফন করা হয় টিক্কারচর কবরস্থানে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শারমীন সুলতানা বলেন, আমাদের মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগে এখনো ডিএনএ ল্যাব চালু হয়নি। লাশের পরিচয় শনাক্তসহ অন্যান্য প্রয়োজনে ডিএনএ প্রযুক্তির দরকার হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চাহিদা অনুসারে আলামত ঢামেক কিংবা পুলিশের মালিবাগের ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়।
কুমিল্লার এডিশনাল এসপি (উত্তর) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী বলেন, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচয় শনাক্ত করতে আমরা পিবিআই ও সিআইডির সহায়তা নিয়ে থাকি। প্রয়োজনে ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। লাশ বিকৃত ও নষ্ট হয়ে গেলে অনেক সময় প্রযুক্তির মাধ্যমেও কাজ হয় না।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কুমিল্লা শাখার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশন বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য যে জায়গা দিয়েছে তা খুবই সামান্য। তাই পুরুষ ও নারীর কবর দেয়ার জন্য ইসলামী শরিয়া মোতাবেক যেটুকু কবর খনন করার কথা তা সেখানে সম্ভব হয় না। কবর খনন করতে কোদাল চালাতেই মাটির নিচ থেকে পুরোনো লাশ, হাড় কিংবা কঙ্কাল উঠে আসে।
সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল হাসেম বলেন, নগরীর একাধিক পরিত্যক্ত স্থানের লিজ পেতে পাউবোর সহায়তায় জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিকল্প একটি কবরস্থান না করা গেলে টিক্কারচর কবরস্থানে আর লাশ দাফন সম্ভব হবে না।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, টিক্কারচর কবরস্থানের উন্নয়নে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু হবে। টমছমব্রিজ কবরস্থান বর্ধিত করতে ইতোমধ্যে ৬০ লাখ টাকার জমি কেনা হয়েছে। এছাড়া নগরীতে আরো কয়েকটি কবরস্থান করার পরিকল্পনা রয়েছে।