কুমিল্লায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের চোখে মুখে আনন্দের রেখা ফুটে উঠেছে। এসব সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার ১৬টি উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠগুলো। ফুলের মিষ্টি সুবাস ছড়াচ্ছে পুরো এলাকাজুড়ে। আমনের ফসল ঘরে তুলে একই জমিতে সরিষার বাম্পার ফলনে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে সরিষা চাষীদের মুখে। এদিকে কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সরিষা চাষের দিকেই ঝুঁকছেন এই জেলার অনেক কৃষক।
আঞ্চলিক কৃষি অফিসের তথ্য মতে, জেলায় এবার সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে জেলায় ১১ হাজার ৬’শ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
ধান-পাট ও মৌসুমী সবজি কুমিল্লা জেলায় অধিক চাষাবাদ হলেও দিন দিন সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলা কৃষি অফিস ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে সরিষা আবাদের কৃষকের সংখ্যা। সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলি চাষাবাদের জন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে চলতি বছর প্রায় ৯ হাজার কৃষককে অর্থ প্রণোদনা ও সার বিতরণ করা হয়।
কুমিল্লার মুরাদনগর, আদর্শ সদর, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, ব্রাহ্মনপাড়া, বরুড়া, চৌদ্দগ্রাম, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, তিতাস, চান্দিনা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় এ বছর সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এবারের মৌসুমেও এসব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাঠের পর মাঠ সরিষার হলুদ আলোয় জ্বলে উঠেছে।
কুমিল্লা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার কুমিল্লা জেলায় ১১ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমের মতো এবারও মুরাদনগর উপজেলায় ৫ হাজার ৬’শ হেক্টর জমিতে সরিষা ফলনে শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া হোমনায় ১ হাজার, নাঙ্গলকোটে ৭’শ, মেঘনায় ৭’শ, তিতাস ৪’শ, দেবিদ্বারে ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার মুরাদনগর উপজেলায় দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে দুলছে সরিষা আর সরিষা। কৃষকরা পরম পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সরিষার মাঠে। মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে জমি থেকে সরিষা সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। তারপর এসব সরিষা যাবে তেল তৈরির মিল-কারখানায়। কৃষকরা জানান, কম পুঁজিতে সরিষা চাষে দ্বিগুণ লাভ হয়।
কৃষবিদ সুবীর কুমার সরকার জানান, বিগত বছর থেকে এবার কুমিল্লা সরিষ বাম্পার ফলন হয়েছে। সরিষা আবাদের বিষয়ে চাষীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে পারলে তারা সেরা সরিষা বান্ধব চাষী হয়ে উঠবে। আর এখানকার সরিষা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে। আমরা নিয়মিত কৃষকদের কর্মশালার মাধ্যমে জেলা জুড়ে সরিষা চাষের আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করছি।
মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর গ্রামের সরিষা চাষি জাকারিয়া সরকার বলেন, এ বছর ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার গাছ ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।
একই গ্রামের কৃষক মনির হোসেন জানান, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। ভালো দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরও অনেকেই ঝুঁকে পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া সরিষা চাষের জমিতে ধানের আবাদও ভাল হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম পড়ে বলে তিনি জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুজিত চন্দ্র দাস বলেন, সরিষা লাভজনক পণ্য হওয়ায় ধীরে ধীরে কুমিল্লার কৃষকদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। করোনকালীন আমরা অন্যান্য ফসলের মতো সরিষা আবাদে সরকারি অর্থ ও সার বীজ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করেছি। এছাড়া এ বছর সরিষা মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় এ জেলায় দেরিতে অনেক স্থানে সরিষা চাষাবাদ করা হয়। আমরা সবসময় কৃষকদের চাষাবাদের ব্যাপারে সব ধরণের সহযোগিতা পরামর্শ দিয়ে আসছি। সরিষা আবাদে কৃষকদের সাথে উঠান বৈঠক ও উপজেলা ভিত্তিক কৃষিবিদদের মাধ্যমে নিয়মিত কর্মশালা করছি।
তিনি আরও বলেন, সরিষা চাষ করে কুষকরা শুধু তেলই তৈরি করে না। সরিষা ভাঙ্গিয়ে খৈল ও গাছ থেকে ভূষি তৈরি হয়, যা ভালো গো-খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।