কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে স্থাপিত ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ ইউনিটে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ছয় মাসে এ ইউনিটে ৬৬৩ জন রোগী মারা গেছেন। আইসিইউ ফাঁকা নেই। সীমিতসংখ্যক আইসিইউ শয্যা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। এখানে রোগীর তুলনায় জনবল, রিয়েল টাইম পলিমার চেইন রি-অ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) ল্যাব, যন্ত্রপাতি এবং ওয়ার্ড ও আইসিইউ শয্যার সংকট রয়েছে। কুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, কুমিল্লায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় জেলার দেবিদ্বারে। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে কুমিল্লায় করোনা রোগী শনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ অবস্থায় করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। ২৯ এপ্রিল থেকে এখানে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। পরে কুমেক হাসপাতালের একটি ভবনে ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ ইউনিট স্থাপন করা হয়।
করোনা ইউনিটের একজন চিকিৎসক জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এ ইউনিটে করোনা উপসর্গ নিয়ে ও আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন মোট ৩ হাজার ৯২৭ জন। এসব রোগীর মধ্যে মোট ৬৬৩ জন মারা গেছেন। এ সময়ে আইসিইউতে মোট মৃত্যুর হার ৬৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৩৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বর্তমানে এ ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন ৯৩ জন।
একাধিক রোগীর স্বজন জানান, এখানে প্রতিদিনই করোনা রোগী মারা যাচ্ছেন। আইসিইউ শয্যার জন্য রোগীদের স্বজনরা হাহাকার করছেন। করোনা ইউনিটের একাধিক চিকিৎসক-কর্মকর্তা জানান, এখানে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। এক্ষেত্রে কেউ সুস্থ হচ্ছেন, কেউ বা চলে যাচ্ছেন না ফেরার দেশে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোস্তফা কামাল আজাদ জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার চাপ বেশি। ল্যাবে একটি মাত্র ল্যাব রয়েছে, তাই মাঝেমধ্যেই বিঘ্ন ঘটে। এখানে আরেকটি ল্যাব প্রয়োজন।
কুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন জানান, শীতে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে, সেই সঙ্গে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। আশপাশের জেলা থেকে রোগীরা আসছেন। এখানে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন আইসিইউ শয্যা আছে মাত্র ১৮টি। চিকিৎসক, ওয়ার্ড, জনবল ও যন্ত্রপাতি বাড়ানো গেলে রোগীরা আরো বেশি সেবা পাবেন।
এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে করোনা পরীক্ষার ল্যাব এবং হাসপাতালে ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ ইউনিট স্থাপিত হওয়ায় কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলার লোকজন নমুনা পরীক্ষাসহ চিকিৎসাসেবার সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।