শাহাদাৎ হোসেন ইমরান
১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে সারাদেশে চলছে গ্রেফতার আতঙ্ক।এরই মধ্যে দলটির প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে বলে জানা গেছে। তাই গ্রেফতারেই শেষ কিনা সমাবেশ সেটা নিয়েও রয়েছে আশঙ্কা। পথে পথে তল্লাশীর নামে চলছে হয়রানি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে দলটির হাইপ্রোফাইলের প্রায় সব নেতাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যারা গ্রেফতারের বাহিরে রয়েছেন তারাও নজর দারিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গ্রেফতার বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে রয়েছে- দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্ববায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এ্যাড. শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর-রশিদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম,নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূয়াই জুয়েল, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, তাঁতি দলের দলের আহ্ববায়ক আবুল কালাম আজাদ, ছাত্র দলের সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক রাকিবুল ইসলামসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের দলীয় কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়। দলটির বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছেন, ৩০ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দলটির প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছেন। সুতরাং এখন গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছে সবাই। সমাবেশকে বানচাল ও লোক সমাগম যেন না করতে পারে সেজন্য এই গ্রেফতার আতঙ্ক চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলে জানান সূত্রটি।
সরেজমিন, রাজধানীর প্রবেশ পথ উত্তরার আবদুল্লাহপুর, কমলাপুর রেল স্টেশন, লঞ্চ ঘাট, গাবতলী, পোস্তগোলা ব্রিজ, বাবুবাজার ব্রিজ, সদরঘাট, পূর্বাচল ৩০০ ফিট, কাঁচপুর ব্রিজসহ বেশকিছু পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি দেখা যাচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায়, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বসানো চেকপোস্ট গুলোতে গতকাল শুক্রবার পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যদেরও দেখা গেছে। সেখানে তল্লাশি করা হচ্ছে সবাইকে। বাস থামিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে যাত্রীদের তল্লাশী করা হচ্ছে। সেই সাথে কি কাজে ঢাকায় প্রবেশ করা জানাসহ নিশ্চিত হচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
চেকপোস্টে কড়াকড়ি তল্লাশী সম্পর্কে জানতে চাইলে কোন প্রকার কথা বলতে নারাজ পুলিশ সদস্যরা। শুধু তারা বলছেন, প্রতিদিনের মত আমরা তল্লাশীর কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিশেষ করে টার্মিনাল এলাকায় পুলিশের এ ধরনের কার্যক্রম বেশি চোখে পড়ার মত। সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী অভিযানের তকমা লাগানো হলেও মূলত আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশ উপলক্ষে এ ধরনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।একইসাথে সন্দেহভাজনদের আটকও করা হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি পুলিশের উর্দ্ধতনরা। তবে তাদের দাবী ১৫ দিনের বিশেষ অভিযানের অংশ হিসাবে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ডিএমপির থানাগুলোতেও বাড়ানো হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। তিনজনকে একসাথে দেখলেই থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্তোষজনক ব্যাখা না পেলে নেওয়া হচ্ছে থানাতে। এরপর তাদের ব্যবহৃত মোবাইল চেক করে সন্দেহজন কিছু পেলেই আটক দেখানো হচ্ছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দাবী করেছে।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার দেখিয়েছে ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে গতকাল পল্টন থানায় করা মামলায় তাঁদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শুক্রবারেই তাঁদের আদালতে পাঠানো হবে।
এর আগে, মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বাসা থেকে আটক করে পুলিশ।
কারাগারে ফখরুল-আব্বাস -রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন ডিবির পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম।এ দিন আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী তাদের জামিনের আবেদন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।