টঙ্গীতে পরপর দুই পোশাক শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদে গত দুই দিন ধরে বিক্ষোভ করছে কারখানা প্রায় সহশ্রাধিক শ্রমিক। ঘটনার পর থেকে কর্তৃপক্ষ মূল ফটকে নোটিশ টানিয়ে কারখানা বন্ধ করে পালিয়ে গেছে। সোমবার সকালে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করলে ৪ নারী শ্রমিক আহত হয়েছে।
পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর কারখানার কাজ করাকে কেন্দ্র করে অপারেটর রনিকে রাস্তায় ফেলে বেদড়ক মারধর করে কারখানার লাইনচিফ সোলেমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী এবং গত ৯ জানুয়ারি কারখানার সামনে আয়রন ম্যান শফিক মিয়া, সুইং অপারেটর আফজাল হোসেনদের লাইনচিফ সোলেমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয়।
গত বৃহস্পতিবার কারখানার ভেতরে সুইং সেকশনের শ্রমিক রনি ও লাইনচীফ সোলেমানের মধ্যে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে বিষয়টি তারা কারখানার মালিক আসাদুজ্জামানসহ জিএম সাজ্জাদ হোসেনকে জানায় এবং লাইনচিফ সোলেমানের অপসারণসহ শাস্তির দাবী করলে মালিক পক্ষ শ্রমিকদেও কারখানা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কিন্তু সোলেমানকে অপসারণে অপারগতা প্রকাশ করেন। ঘটনার দিন রাতেই বাসায় ফেরার পথে বহিরাগত লোকজন দিয়ে কারখানার সামনে রনিকে মারধর করে লোকমান ও তার লোকজন।
শুক্রবার কারখানা বন্ধ থাকার পর শনিবার এনিয়ে শ্রমিকরা কারখনার সামনে কর্মবিরতি পালন এবং ঘটনার বিচার দাবী করে বিক্ষোভ করে। শ্রমিক বিক্ষোভ এড়াতে মালিক পক্ষ রবিবার কারখানার মূল ফটকে কারখানা বন্ধের নোটিশ টানিয়ে। নোটিশে বলা হয়, বে-আইনি ধর্মঘট ও উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। এই অবস্থায় কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা করা সম্ভব না। এ নোটিশের প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা কারখানা কর্তৃপক্ষ ন্যায় বিচার করেনি বলে আন্দোলনে নামে এবং বিসিকের ফিডার রাস্তা বন্ধ করে রাখে।
১১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখ বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে বিষয়টি ফয়সালার সিদ্ধান্ত থাকলেও সকাল হইতেই শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকে এবং সকাল ১০ টায় বিসিকের ফিডার রাস্তা বন্ধ করে ব্যানারসহ তাদের দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে মিছিল শুরু কওে এবং রেডিসনের শ্রমিকরা আশেপাশের দিশারী গার্মেন্টস লিমিটেড, জিন্স এন্ড পোলো, এবার ফ্যাশন, পেট্রিয়ট, ইকো, রেডিসন অ্যাপারেলসসহ অ্ন্যান্য গার্মেন্টসের শ্রমিকদের ফ্যাক্টরি থেকে নামিয়ে বিসিকের রাস্তায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ তাদেও ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করল কারখানার আছমা, নূসরাৎ, সানী ও রুমানা নামে ৪ শ্রমিক আহত হয়েছে।
পরে উল্লেখিত ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে। এ সময় শ্রমিকদের নেতৃত্ব প্রদান করেন জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী পরিষদ গাজীপুর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন ভূইঁয়া এবং টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন সাহারা মার্কেট টঙ্গী। ঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থলে জিএমপির এডিসি অপরাধ দক্ষিণ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ অবস্থান করছে। পরে পুলিশ কারখানার লাইন চিফ সালমানকে গ্রেফতারপূর্বক অপসারণের নিশ্চয়তা প্রদান করলে শ্রমিকরা যায় ।
এ বিষয়ে কারখানাটির মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, শ্রমিকদের এ অন্দোলনটি অযৌক্তিক। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি দক্ষিণ) মো. নূরে আলম বলেন, টঙ্গী বিসিক এলাকার বেশ কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করতে চেয়েছিলো বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।