মোহাম্মদ রাসেল কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি: দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে ১৯ দফা দাবী নিয়ে উখিয়া-টেকনাফের ১০টি ক্যাম্পে পৃথক পৃথক সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। সমাবেশে তাদের প্রধান স্লোগান ছিল, ‘উই ওয়ান্ট টু গো হোম, উই ওয়ান্ট টু রাইট’।
রোববার (১৯ জুন) সকাল ১০ টায় ‘গো হোম ক্যাম্পেইন’ শিরোনামে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে স্ব-উদ্যোগে এ সমাবেশ করেছেন তারা।
সুত্রে জানা গেছে, সকাল ৮ টা থেকে উখিয়ার ৯, ১৪, ১৩, ১৭, ওয়েস্ট-২, ওয়েস্ট-১, ৪ ও ১৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং টেকনাফের জাদিমুড়া ক্যাম্পে সমাবেশ হয়েছে। একই সাথে ক্যাম্পগুলোর পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পের সববয়সী রোহিঙ্গারাও সেখানে অংশ নেন। ক্যাম্পের বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে রোহিঙ্গারা অবস্থান নিতে শুরু করে। তারা নিজেদের রোহিঙ্গা জাতির স্বীকৃতির দাবীর পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দাবী জানান। মিয়ানমারের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী তারা। তারা স্বদেশেই ফিরতে ইচ্ছুক। তবে এ ক্ষেত্রে নিরাপদ প্রত্যাবাসন চান তারা।
“রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী”র আয়োজনে একযোগে ১০টি ক্যাম্পে এ সমাবেশ হলেও কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। প্রতিটি ক্যাম্পে ৫০০ থেকে ১০০০ রোহিঙ্গা খন্ড খন্ড জমায়েত হয়ে এ সমাবেশ করে।
সমাবেশে উত্থাপিত দাবীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পূর্ণ নাগরিক মর্যাদায় নিজ দেশ মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসন, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ, আশিয়ান, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সম্পৃক্ততা, গ্রামে গ্রামে প্রত্যাবাসন, প্রত্যেকের নিজের ভিটেমাটি, জমি-জমা ফেরত।
উখিয়ার ১৪নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি হোসাইন আহমদ বলেন, সম্মানজনক প্রক্রিয়ায় আমরা নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই। আমাদের আশা সমাবেশে উত্থাপিত রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক দাবিগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্ব পাবে।
জাদিমুড়া শিবিরের রোহিঙ্গা আমির হোসেন বলেন, সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরতে চাই। বিশ্ববাসীর কাছে এটাই আমাদের মূল দাবি। বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, আমরা কৃতজ্ঞ।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দাঁড়িয়ে নিজ দেশে বাড়ি ফেরার আকুতি জানিয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করেছে তারা। তাদের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ছাড়া বড় কোনো জমায়েত কিংবা বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
১৬ এপিবিএন অধিনায়ক (এসপি) তারিকুল ইসলাম তারিক ও ৮ এপিবিএন অধিনায়ক (এসপি) শিহাব কায়সার খান জানান, সমাবেশের তথ্য আমরা আগেই পেয়েছি। ক্যাম্প এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে সকল প্রস্তুতি ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হয়।
প্রসঙ্গতঃ একই দাবিতে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন স্বপ্ন দেখানো নেতা মুহিবুল্লাহ।