মোঃ মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া, নরসিংদী প্রতিনিধি: বাংলা নববর্ষকে ঘিরে নির্ঘুম, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নরসিংদীর পলাশের মৃৎশিল্পীরা। আসছে ১৪ এপ্রিল বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ। আর এ নববর্ষে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসে বর্ষবরণ মেলা।
এইসব মেলায় চাহিদা থাকে নানা রকমের খেলনা, মাটির জিনিস পত্রের। আর মেলাকে দৃষ্টিনন্দিত করতে মৃৎশিল্পীরা নিজের হাতে নিপুণ কারু কাজে মাটি দিয়ে তৈরি করেন শিশুদের জন্য রকমারি পুতুল, ফুলদানি, রকমারি ফল, হাড়ি, কড়াই, ব্যাংক, বাসন, থালা, বাঁটি, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, টিয়া, ময়না, ময়ূর, মোরগ, খরগোশ, হাঁস, কলস, ঘটি, মুড়ি ভাজার ঝাঞ্জুর, চুলা ও ফুলের টবসহ বিভিন্ন মাটির জিনিসপত্র। পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার কুমারটেক (পালপাড়া), টেঙ্গরপাড়া ও জিনারদী ইউনিয়নের বরাব গ্রামে মৃৎশিল্পের কাজে জড়িত রয়েছে প্রায় ১০০টি পরিবার।
তারা বিভিন্ন উৎসবে মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বাংলা নববর্ষ বরণে জেলার বিভিন্ন স্থানের মেলায় অধিকাংশ মাটির সামগ্রী সরবরাহ করে থাকেন এসব মৃৎশিল্পীরা। তাই এখানে পুরুষ মৃৎশিল্পীর পাশাপাশি নারী মৃৎশিল্পীরাও সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। তার মধ্যে উপজেলার কুমারটেক পালপাড়া গ্রামে বসবাসরত প্রায় ২০টি পাল পরিবার। তাদের অধিকাংশ নারী-পুরুষই শ্রমের বিনিময়ে তাদের উন্নয়নের ভিত শক্ত করেছেন।
বৈশাখী মেলা উপলক্ষে নারী মৃৎশিল্পীরা নিজের হাতে নিপুণ কারু কাজে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন শিশুদের নানা রকম খেলনা। এখন তারা ব্যস্ত সময় পারছেন। যেন দম ফেলবার ফুসরত নেই। মৃৎ শিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের পাঁচ দিন আগে থেকে শুরু হবে খেলনা গুলোকে দৃষ্টিনন্দিত করার কাজ। দেওয়া হবে বাহারি রং, নকশা।
সরেজমিনে উপজেলার কুমারটেক পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পী দিপালী চন্দ্র পাল, নারায়ন চন্দ্র পাল, জয়কৃঞ্জ পাল, নিপেন্দ্র চন্দ্র পাল, ওপেন্দ্র চন্দ্র পাল, ফনিন্দ্র চন্দ্র পাল দেবিন্দ্র চন্দ্র পাল, ওমেল্য চন্দ্র পাল মাটির খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
এখানকার মৃৎশিল্পীরা জানান, পারিবারিকভাবেই তারা পৈত্রিক পেশা এই মাটির কাজ ধরে রেখেছেন। মাটির তৈরি নানা খেলনা রং করায় ব্যস্ত এখানকার আরেক মৃৎশিল্পী মনি রানী পাল জানান, আসছে বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে এক একটি পরিবার প্রায় ২ হাজার খেলনাসহ মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই রংয়ের কাজও শেষ করা হবে। মেলায় বিক্রির জন্য পাইকাররা এসে কিনেও নিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমারটেক পালপাড়া গ্রামের ২০টি পরিবারের প্রায় ৪০ জন নারী তাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের জন্য মৃৎশিল্পের কাজ করে যাচ্ছেন। মৃৎ শিল্পীরা জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সময়টাতে এ শিল্পের কদর থাকলেও বছরের অন্যান্য দিনে তারা বেশ দূরাবস্থায় থাকেন। শুধু মেলা এলেই কেবল কর্মমুখর হয়ে ওঠে মৃৎ শিল্পীসমৃদ্ধ পালপাড়া গ্রাম। পহেলা বৈশাখের আগে মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন নানা সামগ্রী তৈরিতে।তাই পালপাড়ায় বিরাজ করে এক উৎসব মূখর পরিবেশ।