সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোণা প্রতিনিধি : নেত্রকোণা থেকে পানি নামলেও ভাল নেই গ্রামীণ জনপদের বানভাসি মানুষ।গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ হাটবাজার, রাস্তাঘাট এখনও পানিতে তলিয়ে রয়েছে।চরম দুর্ভোগের পাশাপাশি নানা সঙ্কটে দিন যাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের।বানের পানি আর ঝড়-তুফানে অনেকেই মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। অনাহার-অর্ধাহারে সংসার চলছে অসংখ্যবানভাসি মানুষের।দীর্ঘদিন পানিবন্দি অবস্থায় থাকা মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। যদিও সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।সেই সঙ্গে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্তদের সরকারি উদ্যোগে চিকিৎসাসেবা চলছে। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বহু মানুষ এসব সেবা গ্রহণের সুযোগ নিতে পারছেন না পানিবন্দি থাকার কারণে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোণার নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে যেতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুতই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে।
বারহাট্টা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মাইনুল হক কাসেম জানান, বারহাট্টা উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ৮শতাধিক মানুষ। এদের মধ্যে অনেক পরিবার সম্পূর্ণরূপে গৃহহারা হয়েছে।এমন তথ্য উঠে এসেছে বারহাট্টা উপজেলার সরেজমিন ঘুরে।
তিনি আরো জানান, এখনো পানিবন্দি অনেক মানুষ। ফসলি জমি পানি তলিয়ে গেছে আগেই। বন্যা ও ঝড়-তুফানে অনেকের বসতঘর ভেঙে মাটিতে মিশেছে। গৃহহারা হয়ে তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রীত হয়ে থাকছেন।উপজেলাসদরসহ উচু এলাকা থেকে পানি নামলেও তুলনামূলক নিচু অনেক এলাকার হাজার হাজার বসতবাড়ি এখনও পানিতে নিমজ্জিত। তিনি আরো জানান, প্রতিটি ইউনিয়নেই বন্যায় এখনো তলিয়ে আছে কয়েক হাজার বাড়িঘর ও মানুষ। প্রায় ৮শত মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। সব সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলায় মাসিক সভায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করতে বলে দেওয়া হয়েছে।
আরো খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু সাহতা ইউনিয়নই নয়, বারহাট্টা সদর, চিরাম, আসমা, রায়পুর,সহ প্রতিটি ইউনিয়নে এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় এসব এলাকায় মানুষ পানিতেই চলতে হচ্ছে।নানা দুর্ভোগ, সংসারে নানা সঙ্কট লেগে থাকার পাশাপাশি পানিবাহিত রোগও দেখা দিয়েছে।
নেত্রকোণা সিভিল সার্জন ডা. সেলিম মিয়া বলেন,বন্যার কারণে পানিবাহিত রোগ বেড়েছে। অনেক লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বেশ কিছু মানুষ চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের মেডিক্যাল টিম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে নেত্রকোণার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। যাতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ে। তবে বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, নেত্রকোনায় বন্যাকবলিত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব দলে চিকিৎসক ছাড়াও নার্সসহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অনেকেই আছেন। প্লাবিত এলাকার সবখানেই যেন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিক্যাল টিমকে নির্দেশনা দেয়া আছে। এরপরও পুরো বিষয়টি যেন সুষ্ঠুভাবে করা যায়, এ জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয় তদারকি করছে।
এখনও সেভাবে রোগ-ব্যাধি ছড়ায়নি। কেবল বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির শঙ্কা রয়ে যায়। তবে সেজন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে, সব রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা তৎপর রয়েছি। কেউই চিকিৎসার বাইরে থাকবেন না। নেত্রকোণায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের জন্য বিভিন্ন এলাকায় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, একইসঙ্গে রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সংগঠনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও জানান এ চিকিৎসক।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস বলেন, বিভিন্ন মেডিক্যাল টিম মাঠে আছে, প্রয়োজনে আরও গঠন করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া কিংবা অন্যান্য রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়নি। এর কারণ শুকনো খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর সে রোগগুলোর ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে। বন্যাকবলিত এলাকায় মেডিক্যাল টিম নিয়মিত পরিদর্শন করছে বলেও জানান তিনি।