রিয়াজুল সোহাগ, নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি
নোয়াখালীর সদর উপজেলায় সিএনজি চালক আব্দুল হাকিমকে (৩৫) জবাই করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সিএনজিচলিত অটোরিকশা জমা দেওয়ার কথা বলে চালক হাকিমকে তার বাড়ি পশ্চিম চরমটুয়ার সফিগঞ্জ বাজারের পাশে ডেকে নিয়ে যান অটোরিকশার মালিক মহিম। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানেতে ওঁৎ পেতে ছিলেন— কামাল, রিপু, মোমেন, নুর আলম। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে মহিমসহ অন্য আসামিরা আবদুল হাকিমকে মুখ ও হাত-পা বেঁধে সফিগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ পাশের ইদ্রিস মিয়ার বাড়ির পাশ্ববর্তী একটি সয়াবিন ক্ষেতে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাকে গলা কেটে হত্যার পর মরদেহ বস্তায় ঢুকিয়ে ওই ক্ষেতের মধ্যে গর্ত করে মাটি চাপা দিয়ে চলে যান। পরদিন সকালে চাষিরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রুবিনা বেগম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জন আসামি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এই ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শনিবার (১১মার্চ) বিকেলে সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুর পৌনে ১টার দিকে এক প্রেস কনফারেন্সে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলাম।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন,সদর উপজলার পশ্চিম চরমটুয়া গ্রামের মো.মমিন উল্যার ছেলে মো.মহিন (২৭),পশ্চিম মাইজচরা গ্রামের রেজিয়াগো বাড়ির মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে মো.কামাল ওরফে কামাল ডাকাত (৩৮), হারুন মোল্লা বাড়ির আনোয়ারুল হক নশুর ছেলে মো.আজাদ হোসেন (৩২), পশ্চিম চরমটুয়া গ্রামের অজি উল্যাহ পাটোয়ারী বাড়ির শাহজাহানের ছেলে রিপু মিয়া (২১) আক্কাস সওদাগর বাড়ির আক্কাস সওদাগরের ছেলে জাহিদ হাসান (২৮), পশ্চিম চরমটুয়া গ্রামের মাহফুজের বাপের বাড়ির মো.সেলিমের ছেলে সোহেল হোসেন ওরফে শাকিল (২৪), একই গ্রামের দোকান বাড়ির মকবুল আহমেদের ছেলে মমিন উল্যাহ (৩৭),পাটোয়ারী বাড়ির অজি উল্যার ছেলে নূর আলম মিস্ত্রি (৫৫)।
প্রেস কনফারেন্সে পুলিশ সুপার জানায়, ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীর সাথে ভিকটিম নিহত সিএনজি চালক আব্দুল হাকিমের সাথে পূর্ব শক্রতা ছিল। একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলা চলমান রয়েছে। পরিকল্পনাকারী পূর্ব শক্রতার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আব্দুল হাকিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অর্থের লোভ দেখিয়ে আব্দুল হাকিমের সিএনজির মালিক মহিমকে ব্যবহার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো জানায়, তদন্তকালে আসামি সোহেলের ভাষ্যমতে আসামি রিপুর বাড়ি থেকে শাবল ও কোদাল উদ্ধার করা হয়। মামলার মূল পরিকল্পনাকারী হত্যাকান্ড সংগঠনের জন্য আসামি মহিনের সাথে ৪লক্ষ টাকা চুক্তি করেছিলেন।
এছাড়া তিনি জানান, আসামি রিপু ও সোহেল ওরফে শাকিল হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। গতকাল রোববার বিকেলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষ হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।