এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের ওপর নজর দিতে হবে। কারণ, এ থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সব রপ্তানিকারকের জন্য একই হারে করপোরেট কর নির্ধারণ ও বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা প্রদান করতে হবে। এ ছাড়াও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার আগে আমাদের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।
শনিবার (৯ এপ্রিল) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে টেকসই রপ্তানি বৃদ্ধি; প্লাস্টিক খাতের কৌশল নির্ধারণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধিতে পণ্যের বহুমুখীকরণের কোনো বিকল্প নেই, যেখানে প্লাস্টিক খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজসহ প্লাস্টিক খাতের বাৎসরিক রপ্তানি প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। এ খাতের বিকাশে নীতিসহায়তা প্রদান, দেশে বিশ্বমানের টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন, উৎপাদিত পণ্যের পেটেন্ট স্বত্ব, নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন, দক্ষ মানবসম্পদ, এসএমইদের সক্ষমতা বাড়ানো বিশেষ করে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণে বিদ্যমান শুল্ক হ্রাস করতে হবে।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, জাতিগতভাবে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে। একই সঙ্গে আমাদের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমান সরকার দেশের বেসরকারি খাতের অগ্রগতির জন্য ক্রমাগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, যা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, বেসরকারি খাতের সহায়তায় আমরা সব নেতিবাচক সমালোচনা মোকাবিলা করতে পেরেছি এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে পেরেছি। এলডিসি উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের প্লাস্টিক খাতের সার্বিক উন্নয়নে বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে।
ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্লাস্টিক খাতের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি এবং এ খাতের স্থানীয় বাজারের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী খাতগুলোর মধ্যে ১২তম স্থানে রয়েছে প্লাস্টিক খাত এবং এটি প্রতিবছর প্রায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থায়ন জটিলতা, কেন্দ্রীয় বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধার অনুপস্থিতি, অপ্রতুল দক্ষ মানবসম্পদ ও পণ্যের বহুমুখীকরণ এ খাতের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।
তিনি আরও বলেন, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে আমাদের প্লাস্টিকশিল্প পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা এবং প্রণোদনা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে সক্ষমতা হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এটি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে। এলডিসি-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের আমদানি-রপ্তানি নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার, এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসাসহায়ক পরিবেশের উন্নয়ন, পেটেন্ট রেজিস্ট্রেশন, আইপিআর ইকোসিস্টেম, নতুন পণ্য উদ্ভাবন এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের ওপর আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, আমাদের জিডিপিতে প্লাস্টিক খাতের অবদান ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং এ খাতের মাধ্যমে দেশে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে দেশের প্লাস্টিক খাতের অবদান ০ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আমাদের উৎপাদিত পণ্য মূলত যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পোল্যান্ড, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশে রপ্তানি হয়।
অনুষ্ঠানে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ-পরবর্তী সময়ে দেশের প্লাস্টিক খাতের বিকাশে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কাঠামো সহজীকরণ, সংশ্লিষ্ট নীতিমালার যুগোপযোগীকরণ, পণ্য জাহাজীকরণে শুল্ক হ্রাস, রপ্তানি বৃদ্ধিতে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন, নতুন পণ্য উদ্ভাবনে ডিজাইনিং কার্যক্রমের ওপর জোরারোপ, বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসাসহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপের আহ্বান জানায় ঢাকা চেম্বার।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমানেরর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (অডিট কাস্টমস) ড. মো. শহীদুল ইসলাম, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন ও ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রহমান অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।