নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্যদিকে বিজয়নগর, নাইটিঙ্গেল মোড়, ফকিরাপুল মোড় ঘুরে দেখা যায়, নয়াপল্টন এলাকায় ব্যক্তিগত কাজ কিংবা নিজ বাসভবনে ঢুকতে গেলে পুলিশের নানা রকমের প্রশ্নের সুম্মখীন হতে হচ্ছে ওই এলাকায় বসবাসরতদের। চেক করা হচ্ছে তাদের মোবাইল ফোনের মেসেঞ্জার- হোয়াটসঅ্যাপ। এতে চরম ভাবে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা পুলিশ বলছে, ঊর্ধ্বতন নির্দেশনায় এই ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। এই এলাকায় যদি কারও বাসা থাকে, তাদের আমরা ঢুকতে দিচ্ছি, এর বাইরে কেউই ঢুকতে পারবে না।
কামরুল ইসলাম। কাজ করেন একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে। পল্টন এলাকায় অফিস হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না অফিসের দিকে। পরে কোম্পানির মালিকের সাথে মোবাইলে কথা পুলিশ। তারপরেও কামরুলের মোবাইলের মেসেঞ্জার- হোয়াটসঅ্যাপ চেক করে ঢুকতে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান জানান, ওপর থেকে নির্দেশনা আছে এই এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। তারপরও আমরা ওই এলাকায় বসবাসরত বা যৌক্তিক কারণে কেউ এলে তাকে আমরা ঢুকতে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে চেক করছে।
বিপাকে প্রবাসীরা-
জনি ইসলাম। এসেছেন কুষ্টিয়া থেকে সাথে আছেন বড় ভাই জামির উদ্দিন। আজই তার টিকিট- পাসপোর্ট নিতে হতে ট্রাভেল এজেন্সি থেকে।বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বন্ধ থাকবে পল্টন এলাকা।
জনি ইসলাম বলেন, আমি ৫ বছর কাতারে ছিলাম। দেশে আসার পর আবারও চলে যাচ্ছি। ১১ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে আমার ফ্লাইট। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিটও কাটা হয়ে গেছে। এজেন্সি থেকে আমাকে বলেছে যেহেতু ১০ ডিসেম্বর তাদের অফিস বন্ধ থাকবে। তাই আজই সকালের মধ্যেই এসে কাগজপত্রগুলো নিয়ে যাই। আমার টিকিট-পাসপোর্ট সবকিছুই এজেন্সির কাছে। তিনি আরও বলেন, বাড়ি থেকে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। আমাকে ঢুকতে দিল না। এখন আমি ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাব? এখন বাধ্য হয়ে আবার কুষ্টিয়া ফিরে যেতে হবে।
ফাঁকা পল্টন এলাকার আবাসিক হোটেল –
রাজধানীর পল্টন ও আশপাশের এলাকার আবাসিক হোটেলগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ ও গ্রেফতারের জেরে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
হোটেলের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাদের মন্দা চলছে। হোটেলের অধিকাংশ কক্ষই ফাঁকা। হয়রানির ভয়ে মানুষ এ এলাকার আবাসিক হোটেলগুলো এড়িয়ে চলছেন।
তারা বলেন, নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংষর্ষের পর রাস্তায় ব্যাপক তল্লাশি চলছে। এরপর থেকে বর্ডার কমতে শুরু করেছে।
চাপা আতঙ্কে যাত্রী-
১০ ডিসেম্বর সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে চাপা আতঙ্কে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসে কমে গেছে যাত্রীর সংখ্যা। গতকাল শুক্রবার গাবতলী, সায়দাবাদ, কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ বাস কাউন্টার ফাঁকা। এমনকি যাত্রী সংকটে বেশ কয়েকটি কাউন্টার বন্ধও রয়েছে। কর্মীরা হাঁকডাক করলেও প্রত্যাশা মাফিক যাত্রী পাচ্ছেন না।
পরিবহনকর্মীরা বলছেন, অন্যদিনের তুলনায় আজ (শুক্রবার) যাত্রীর সংখ্যা কম। সকাল থেকে আমাদের দুই-একটা বাস ছেড়ে গেছে। অথচ এই সময়ে চার থেকে পাঁচটা বাস ছাড়ে। এ দিক থেকে যাচ্ছেও কম,ওদিক থেকে আসছেও কম।
বাড্ডা থেকে রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করার জন্য টিকেট কেটে মহাখালী ট্রার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন মিজানুর রহমান।
মিজানুর রহমান বলেন, হঠৎ গ্রামে পারিবারিক একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই বাড়ি যাচ্ছি। বাস পাওয়া গেলেও যাত্রী কম থাকায় দেরি করে বাস ছাড়ছে।
পরিবহন কাউন্টারের ম্যানেজাররা বলছেন, শুক্রবারে স্বাভাবিকভাবে যাত্রী সংখ্যা বেশি থাকে। কিন্তু আতঙ্কের জন্য আজ যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। অনেকেই ভাবছেন গাড়ি আছে কি না বা গাড়ি চলছে কি না। একই আতঙ্কে অনেকে ঢাকাও আসছেন না। ফলে জেলা থেকে আগত বাসগুলো প্রায় ফাঁকাই থাকছে।
সমাবেশ ঘিরে ঢাকায় ৭ লাখ মানুষ –
বিএনপিকে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বিএনপির সাত লাখ লোক এসেছে কি না, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, সমাবেশের শর্ত আগেরগুলোই থাকবে। নিরাপত্তায় আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সেখানে রয়েছে। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশের সমন্বয়ে যেভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা গোলাপবাগ মাঠেও থাকবে। আমাদের টিম অলরেডি কাজ করছে। আমরা তদারকি করছি, যেন এ সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের অরাজকতা না হয়। সে লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে।
বায়তুল মোকাররম এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার- শুক্রবার জুমার নামাজের আগে থেকেই বায়তুল মোকাররম এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যের অবস্থান দেখা যায়।যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বায়তুল মোকাররমের অদূরে পল্টন, দৈনিক বাংলা ও গুলিস্তান মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট ও পশ্চিম পাশে অবস্থান করছেন র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।