শিরোনাম দেখে অনেকের চোখ ছানাবড়া। কেউ কেউ খানিকটা অবাকও হয়েছেন হয়তো। কারও কাছে হয়তো হাসির খোঁড়াকি। যে যুগে ভিখিরি ১টাকা ভিক্ষে নেয় না, সে যুগে এক টাকায় সিঙ্গাড়া পাওয়াটা বেশ অবাক হওয়ারই বিষয়। দোকানে মোবাইল রিচার্জ থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে এক টাকা ফেরত না পাওয়াটা বর্তমান সময়ে, একরকম রীতিতে পরিণত হয়েছে। এক টাকার বদলে সমমূল্যের চকলেট দেওয়াটাই বরং বেশি প্রচলিত। স্কুলে রচনা লিখনে টাকার আত্মকাহিনী থাকতো। সেখানে একশ এবং পাঁচশো টাকার আত্মকাহিনী ছিল। বর্তমান সময় পরিক্রমায় খুব তাড়াতাড়ি বইগুলোতে এক টাকার আত্মকাহিনী আসতে পারে বলে মনে হয়। সেই আত্মকাহিনীতে এক টাকার বিলীন হয়ে যাওয়ার দুঃখই পরিলক্ষিত হবে। তবে সেই একটাকার নোটের কিছুটা সুখের জায়গায় যিনি থাকবেন, তিনি প্রদীপ মোদক। যিনি দীর্ঘ ২০ বছরেও বেশি সময় ধরে সিঙ্গাড়া বিক্রি করছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসেও তিনি ১টাকা করেই সিঙ্গাড়া বিক্রি করছেন। প্রদীপ মোদকের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের বড়জোড়া গ্রামে। স্ত্রী মমতা রানী এবং দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলের নাম দেবাশীষ(২২), ছোট ছেলে শুভ (১৬)। বড় ছেলে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত বলে জানান প্রদীপ মোদক। অভাবের সংসারে ছেলের চিকিৎসা করাটা তাঁর উপর ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ’। ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রদীপ মোদক জানান, ২০ বছর আগে তিনি ব্যবসা শুরু করেন হারুয়া বাজারে। তখন বাজারে তেমন কোন দোকান ছিল না। তখন থেকেই সিঙ্গাড়া, পেয়াজু ও মুড়ির মোয়া বিক্রি করেন তিনি। একবারে শুরুর দিকে ৫০পয়সা করে সিঙ্গাড়া, পেয়াজু বিক্রি করতেন তিনি। শেষ দশ বছর ধরে ১টাকা করে বিক্রি করছেন বলে জানান।
তিনি আরও জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এত কম টাকায় বিক্রি করে সংসার চালানো বেশ কঠিন। তবুও তিনি কম টাকায় বিক্রির তার যে ঐতিহ্য, তা ধরে রাখতে চান। বাজারের সিঙ্গাগাড়ার চেয়ে তার দোকানের সিঙ্গাড়া আকারে ছোট বলে, বানানো অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যপার। এই সময়ের মধ্যে বড় সিঙ্গাড়া অনেকগুলো বানানো সম্ভব হলেও পুরনো দিন বদলাতে নারাজ প্রদীপ মোদক।দৈনিক পাঁচশো টাকার মত বিনিয়োগ করে দুই থেকে তিনশত টাকা লাভ করেন তিনি। এই দিয়েই সংসার চালান ।
নিজস্ব কোন স্থায়ী দোকান না থাকায় বর্ষকালে অনেক অসহায় হয়ে পড়েন। রাস্তার পাশে ছোট একটি চৌকিতে তখন বেচাকেনা করার কোন উপায় থাকে না। স্থায়ী একটি দোকান হলে বর্ষাকালে তাঁর সংসার চালানো সহজ হত বলে জানান তিনি।